শেষ বিকেলের অপেক্ষা
সন্ধ্যার আলো ধীরে ধীরে মাটিতে মিশে যাচ্ছে। রোদ আর কুয়াশার মিশ্রণে পুরো পরিবেশ যেন এক স্বপ্নিল রূপ নিয়েছে। একটা পুরোনো বেঞ্চ পড়ে আছে বড় এক ওকের গাছের নিচে। চারপাশ নিস্তব্ধ, কেবল হালকা বাতাসের শব্দ আর দূরে কোথাও পাখির ডাক।
এই বেঞ্চটাই ছিল আরিফ আর নীহারিকার প্রিয় জায়গা। কলেজ জীবনে যখনই একটু নিরিবিলি সময় কাটানোর প্রয়োজন হতো, তারা এখানে এসে বসত। ওকের পাতার ছায়ায় বসে স্বপ্ন দেখত ভবিষ্যতের, হাসত, গল্প করত, আর মাঝে মাঝে নীরবে একে অপরের উপস্থিতি উপভোগ করত।
তবে আজ আরিফ একাই এখানে বসে আছে। হাতে একটা পুরোনো চিঠি, হলুদ হয়ে যাওয়া কাগজের গায়ে সময়ের দাগ স্পষ্ট। নীহারিকা অনেক বছর আগেই চলে গেছে, জীবনের পথে তারা একসঙ্গে চলতে পারেনি। কিন্তু এই জায়গাটা আজও তাদের স্মৃতিগুলো ধরে রেখেছে।
শেষ বিকেলের নরম আলোতে বেঞ্চটা যেন আরিফকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে বসার জন্য। সে ধীরে ধীরে বসে পড়ে, চিঠিটা খুলে আবার পড়ে। চিঠির শেষ লাইনটা পড়তেই তার চোখ ভিজে আসে—
"এই গাছটার নিচে যদি কখনো আমাকে মনে পড়ে, তাহলে এসো। হয়তো দূর থেকে আমি তোমায় দেখব..."
বাতাসে হালকা পাতার মর্মরধ্বনি হয়, যেন কেউ তার পাশে এসে বসেছে। আরিফ চোখ বন্ধ করে অনুভব করে, সময় বদলালেও কিছু অনুভূতি কখনো হারায় না।
গাছের পাতা আস্তে আস্তে ঝরে পড়তে থাকে, আর শেষ বিকেলের আলোয় একটা দীর্ঘ ছায়া পড়ে থাকে বেঞ্চের পাশে…